আমাদের বিদ্যালয় আমাদের সবার কাছে খুব প্রিয়। আমাদের প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে খুব ভালো লাগে, তাই না? কিন্তু ২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত করোনা মহামারির কারণে আমরা অনেক দিন বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। তখন আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমরা যেন পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারি, সেজন্য বিভিন্নভাবে আমাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। এখনো বিভিন্ন কারণে আমাদের অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকরা যোগাযোগ করে থাকেন।
কিন্তু আমাদের অনেক সহপাঠী ছিল বা আছে, যাদের সাথে যোগাযোগ মাধ্যম না থাকার কারণে শিক্ষকরা মহামারির সময় যোগাযোগ করতে পারেননি বা এখনো পারেন না। তাই এবারে আমরা এমন কিছু একটা বানাব যেন কখনও কোনো কারণে আমাদের কোনো সহপাঠী পিছিয়ে না পড়ে। এ শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা বানাব “শিখনের জন্য নেটওয়ার্ক”। এর অর্থ হলো আমাদের এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা দরকার যাতে ভবিষ্যতে আবার কখনও এমন পরিস্থিতি হলেও যেন শিক্ষক সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন আর পড়া শিখিয়ে দিতে পারেন। হয়তো আমাদের মধ্যেই কেউ বড় হয়ে সেটি ডিজাইন করতে পারব। আমরা এখন নেটওয়ার্ক কীভাবে কাজ করে সেটি শিখব, যাতে দরকার হলে বড় হয়ে আরও ভালো নেটওয়ার্ক বানিয়ে ফেলতে পারি।
নেটওয়ার্কিং কী তা বোঝার আগে আমরা একটি কাজ করে নিই। আমাদের কি মনে আছে, পত শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা কী করেছিলাম। হ্যাঁ, আমরা বস্তুর সাথে ভ্রমণের একটি পরিকল্পনা করেছিলাম এবং সেই পরিকল্পনাটি আমরা একটি ফ্লোচার্টের মাধ্যমে দেখিয়েছিলাম। এবার আমরা বাংলাদেশের মানচিত্রে আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনাটি আঁকব, যাকে আমরা আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বলতে পারি। মানচিত্রের ওপরে আমরা যখন যোগাযোগের নেটওয়ার্ক আঁকব তখন বাস, রেল ও লঞ্চ যোগাযোগের জন্য ভিন্ন ধরনের দাগ ব্যবহার করব। রেল যোগাযোগের জন্য দুই সারি আশ, বাস যোগাযোগের জন্য সরলরেখা আর লক্ষ যোগাযোগের জন্য বক্ররেখা ব্যবহার করব। এছাড়াও বাহন যেখানে পরিবর্তন হচ্ছে, সেই জায়গাকে স্টপেজ ধরে একটি চিহ্ন দিব। এবার আমরা আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় যে যে জায়গায় যাব যে সকল জায়গা এবং বাহনগুলো মানচিত্রে আঁকি। একটি উদাহরণ আমাদের জন্য নিচে দেওয়া আছে।
উদাহরণ : শিশির ঢাকায় থাকে। শিশির ও তার বন্ধু জয়াদ নিলে ঠিক করণ ভ্রমণের জন্য দিনাজপুর যাবে। দিনাজপুরের বিখ্যাত কান্তজীর মন্দির তারা দেখতে যাবে, যেটি খুব সুন্দর। তাহলে শিশির ভ্রমণের শুরু যে ঢাকা থেকে হবে সেটি চিহ্নিত করবে। ঢাকা থেকে শিশির প্রথমে ট্রেনে করে রংপুর যাবে এবং তারপর বাসে করে দিনাজপুর যাবে। তাহলে যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে মানচিত্রে শিশির ও সায়াদ নিচের মতো করে মানচিত্রে আঁকবে। তাহলে আমরা এখানে কী করলাম? আমরা বাংলাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বা যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা ভ্রমণ করলাম। ডিজিটাল যোগাযোগের জন্যও এরকম নেটওয়ার্ক বা যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকে, যা দিয়ে আমরা বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি।
শিশির আর জায়াদের মানচিত্রে ভ্রমণের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে আমরাও আমাদের বন্ধুর সাথে মিলে যে ভ্রমণ পরিকল্পনা করেছিলাম, তা পরের পৃষ্ঠায় দেয়া মানচিত্রে সহপাঠীর সাথে মিলে আঁকি।
আমাদের বইয়ে আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনার যোগাযোগ ব্যবস্থা আঁকা শেষ হলে এবার আরও একটি বড় মানচিত্র বোর্ডে টাঙিয়ে শিক্ষক আমাদের সবাইকে সাথে নিয়ে আমাদের সবার ভ্রমণ পরিকল্পনা মিলিয়ে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের চিত্র মানচিত্রে তৈরি করবেন। আমরা আমাদের শিক্ষককে সহযোগিতা করব। আমরা যেহেতু আগেই আমাদের বইয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনার মাধ্যমে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বানিয়ে ফেলেছি, তাই শিক্ষককে সহযোগিতা করা আমাদের জন্য খুব সহজ হবে। আমরা সবাই মিলে পুরো বাংলাদেশের একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারব। একে কিন্তু আরেকভাবে নন-ডিজিটাল নেটওয়ার্কও বলে। পুরো যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বানানো হয়ে যাওয়ার পর আমরা সবাই মিলে আনন্দ প্রকাশ করতে পারি। তবে ঘাঁ, আমাদের অবশ্যই এই বড় মানচিত্রটি যত্ন করে রেখে দিতে হবে পরবর্তী কাজের জন্য।
যদি শুধু বাসের রাস্তা ব্যবহার করি, তাহলে আমাদের তৈরি করা বড় মানচিত্রটি দেখতে অনেকটা নিচের মানচিত্রের মতো হবে। লঞ্চের রাস্তা এবং রেলগাড়ির রাস্তা যোগ করলে আরও অন্য রকম হবে। আামরা একটি বিষয় খেয়াল করতে পারি। শুধু বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করার কারণে আমরা সেন্ট মার্টিন, হাতিয়া বা সন্দ্বীপ যেতে পারিনি। আরেকটি ব্যাপার হলো সত্যিকার বাসের রাস্তা অনুসরণ করলে রেখাগুলো আঁকাবাঁকা হবে কিন্তু আমরা মানচিত্রটি সহজে বোঝার জন্য সরলরেখা ব্যবহার করেছি। এ কারণে কিছু জায়গায় বাস। পানির ওপর দিয়ে গেছে দেখে আমাদের একটু হাসিও পেতে পারে।
এই বড় মানচিত্রটি দিয়ে আমরা আমাদের বাসা থেকে আমাদের পছন্দ করা বা অন্যদের পছন্দ করা ভ্রমণ স্থানে চলে যেতে পারি। এই যে আমরা ভ্রমণের জন্য আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আঁকলাম, একে আমরা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বলতে পারি। নেটওয়ার্ক মানে কিন্তু হলো দুই বা ততোধিক বস্তু/বিষয়/ব্যক্তি যখন একে অপরের সাথে কিছু দিয়ে যুক্ত থাকে। আমরা যে নেটওয়ার্কের চিত্রটি আঁকলাম, একটু ভালো করে দেখলে দেখা যাবে আমাদের মানচিত্রে বিভিন্ন অঞ্চল বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত। আরও ভালোভাবে দেখলে, যেমন, রাস্তাঘাট, তার ওপর দিয়ে চলা যানবাহন, ট্রাক বা বাস টার্মিনাল, টিকেট কাটার অফিস, যানবাহনের চালক বা হেলপার, ট্রাফিক পুলিশ, ট্রাফিক আইন এসব কিছুই সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অংশ। অর্থাৎ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বলতে আমরা আমাদের নিজেদের যাওয়া-আসা বা কিছু একটা আদান-প্রদান বুঝাই। একইভাবে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা, রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা, ডাকযোগাযোগ ব্যবস্থা, ফাইবার অপটিক (একধরনের কাঁচের তৈরি তার যেটি দিয়ে আলোর গতির ন্যায় তথ্য বিনিময় করা হয়)। যোগাযোগ ব্যবস্থা, উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা (কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মানুষের তৈরি যন্ত্র যেটি রকেটের মাধ্যমে আকাশে পাঠানো হয়। এটি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে ঘুরে তথ্য আদান-প্রদানে সাহায্য করে।), মুঠোফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট এসব কিছু মিলেই আমাদের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক।
পরবর্তী সেশনের জন্য প্রস্তুতি
পরবর্তী সেশনের জন্য আমাদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। আমরা আমাদের বইয়ে ও বোর্ডের মানচিত্রে যে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বানালাম, সেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত করে আমাদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। প্রশ্ন তিনটি হলো:
১। রাজধানী থেকে সকল বাস, রেলগাড়ি ও লঞ্চ সময়মতো ছেড়ে যাবে কিনা তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়?
২। রাজধানী থেকে সকল যাত্রী বিভাগীয় শহরে বাহন পরিবর্তন করতে পারল কিনা তা কীভাবে জানা যেতে পারে?
৩। সকল যাত্রী বাহনে উঠল কিনা এবং বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহর পর্যন্ত সময়মতো পৌঁছাতে পারল কিনা তা রাজধানী থেকে কীভাবে জানা যেতে পারে।
আমরা আমাদের পরিবারের সাথে, সহপাঠীদের সাথে, ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সাথে বয়সে বড় কারও সাথে আলোচনা করে তিনটি প্রশ্নের জন্য উত্তর খুঁজে বের করে পরের পৃষ্ঠায় আমার উত্তরা ধরে লিখে নিয়ে আসব।
আগের সেশনে দেওয়া তিনটি প্রশ্নের উত্তর আমাদের নির্ধারিত ঘরে লিখি। নিচে দুইটি ঘর দেওয়া আছে। প্রথম ঘরে যেখানে “আমার উত্তর’ লেখা আছে, সেখানে আমরা যে উত্তর পেলাম তা লিখব এবং সহপাঠীদের উত্তর’ এর জায়গায় আমার সহপাঠী যে উত্তর খুঁজে এনেছে তা লিখি। সহপাঠীর উত্তরে এবং আমার উত্তরে কোনো বিশেষ শব্দ (তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত/ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কিত) থাকলে তা পরের পৃষ্ঠায় নির্ধারিত জায়গায় লিখি।
তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা কিছু বিশেষ শব্দ পেলাম, যা ছাড়া আমাদের তথ্যটি পাওয়া সম্ভব নয়।। বিশেষ শব্দগুলো আমরা নিচের ঘরে লিখতে পারি।
উত্তর থেকে পাওয়া বিশেষ শব্দ |
---|
এবারে চলো আমরা একটি গল্প সহপাঠীর সাথে মিলে পড়ে নিই এবং গল্প থেকেও কিছু বিশেষ শব্দ (তথা আদান প্রদান সংক্রান্ত/ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কিত) খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
পিনা নামের ষষ্ঠ শ্রেণির ছোট, চঞ্চল একটি মেয়ে চট্টগ্রামে থাকে। পিনার ছোট মামা, যে ছিল পিনার খুব খুব খুব প্রিয় একজন মানুষ, থাকেন বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে সুইডেনে। পিনাকে তিনিও খুব আদর করেন। প্রতিবছর পিনার জন্মদিনের আগে পিনা তার ছোট মামাকে একটি উপহার লিস্ট পাঠায় চিঠির মাধ্যমে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটল। পিনার মামা জন্মদিনের দশ দিন আগে পিনার বাবার মোবাইলে ফোন দিলেন এবং বললেন, ‘শোন পিনা, এখন তো তুই ক্লাস সিক্সে পড়িস। এবার কিন্তু জন্মদিনে তুই কী কী চাস, আমাকে ই-মেইলে জানাতে হবে। ই-মেইল পাঠালে আমি সাথে সাথে তোকে রিপ্লাই দিব’। ই-মেইল না পাঠালে কিন্তু উপহারও নাই’। পিনা পড়ে গেল মহা বিপদে, ই-মেইল কী, তাই তো পিনা জানে না!!! কী করে সে ই-মেইল পাঠাবে?
পিনা পরদিন বাবাকে বলল, বাবা ই-মেইল কী? পিনার বাবা হাসলেন আর বললেন, ‘তোর মামা তোকে অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছে, তাই না? আচ্ছা বলছি ই-মেইল কী। ই-মেইল হলো ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো চিঠি পাঠানো। তুই তো এতদিন কাগজে লিখে চিঠি পাঠাতি, আর এটা হলো কম্পিউটার বা মোবাইল দিয়ে কম্পিউটার বা মোবাইলে লিখে চিঠি পাঠানো। ই-মেইল পাঠানোর জন্য একটা ই-মেইল এড়েন লাগে। পিনার বাবা পিনাকে বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে ই-মেইল পাঠাতে হয়। পিনা তার বাবার সহায়তায় বাবার ল্যাপটপ ব্যবহার করে ঠিকঠাক ই-মেইল পাঠাল। দুই দিন পর পিনা তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল মামার কাছ থেকে কোন ই-মেইল এসেছে কিনা? কিন্তু হায়, পিনার মামা তো কোনো ই-মেইল দেননি। তার মানে মামা কি ই-মেইল পাননি? পিনা এবার আবার বাবাকে বলল, “বাবা ছোট মামাকে একটু ফোন দাও তো। আমার ই-মেইল পেয়েছেন কিনা? ছোট মামা তো আমাকে ই-মেইলের কোন রিপ্লাই দেননি’। বাবা মামাকে ফোন দিলেন এবং পিনাকে জানালেন যে পিনার ছোট মামা পিনার কাছ থেকে কোনো ই-মেইল পাননি।
পিনার চিন্তায় রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেল। তখন বাজে রাত দুইটা। পিনা দেখে তার ঘরে একটা বিশাল আকারের কম্পিউটার এসে হাজির হয়েছে। সে কম্পিউটারের মনিটর থেকে একটা হালকা নীল রঙের একটা আলো বের হচ্ছে। পিনা ধীরে ধীরে মনিটরের কাছে গেল। গিয়ে দেখে মনিটরের ভেতর একটা ছোট্ট রোবট পিনার দিকে খুব মায়া মায়া চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। পিনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কে?” ছোট রোবটটি উত্তর দিল, আমি ন্যানো’। দিনা অবাক হয়ে বলল, ‘ন্যানো!!’ ন্যানো বলল, ‘হুম, আমি ন্যানো, আমি ডিজিটাল যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে পারি। আমি দেখলাম তোমার খুব মন খারাপ, তোমার ই-মেইল তোমার ছোট মামার কাছে যায়নি এ কারণে। তাই আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।“ পিনা অবাক হয়ে বলল, ‘আমি যে ই-মেইলটা পাঠাতে পারিনি তুমি কী করে জানলো?” ন্যানো বলল, ‘কম্পিউটারের কোথায় কী হচ্ছে আমি সব জানি।‘
এবার পিনা খুশি হয়ে গেল। পিনা ন্যানোকে বলল, ‘তুমি কি পারবে আমার সমস্যাটা সমাধান করে দিতো। ন্যানো বলল, অবশ্যই পারব। তুমি মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকো আর দেখো আমি কী করি।‘ পিনা দেখল, ন্যানো প্রথমে প্রেরক নামে কিছু একটা খুঁজতে লাগল, সেখানে কিছুক্ষণ পর পিনার বাবার নাম এলো। পিনা ন্যানোকে জিজ্ঞেস করল “আচ্ছা ন্যানো, আমার বাবার নাম কেন এলো ন্যানো বলল ‘তোমার বাবার ই-মেইল ঠিকানা থেকে ই-মেইল গিয়েছে, তাই তোমার বাবার নাম এসেছে। এবার ন্যানো প্রাপক লিখে আবার কী একটা খুঁজতে লাগল। এবার পিনার মামার নাম উঠে এল মনিটার। পিনা জোরে বলে উঠল, “মামা। পিনা বলল, “তার মানে মামা আমার ই-মেইলটা পাবে দেখে নামা হলো প্রাপক বা রিসিভার। তাই না ন্যানো?’ ন্যানো কাজ করতে করতে মাথা নাড়ল। পিনা মনে মনে ভাবল এটা তো পুরোপুরি চিঠি পাঠানোর মতো। যে চিঠি পায় সে প্রাপক আর যে চিঠি পাঠায় সে হয় প্রেরক।
পিনা দেখলো ন্যানো চোখ ছোট ছোট করে আবার কিছু একটা খুঁজছে। কিছুক্ষণ পর ন্যানো কী সব নম্বরসহ একটা সংখ্যা দেখাল এবং বলল এই যে দেখো এটা তোমার ডিজিটাল ঠিকানা। সংখ্যাটা অনেকটা এমন ছিল দেখতে, 125.226.৭.৮৯। পিনা অবাক হয়ে বলল, এটা কী করে ঠিকানা হয়। ন্যানো বলল, একে আইপি এড্রেস বলে। সব ডিভাইসে এমন একটা ডিজিটাল ঠিকানা থাকে। কার কাছে তথ্য যাবে তা এই নম্বর দেখে বোঝা যায় আবার কার কাছ থেকে তথ্যটি আসছে তাও বোঝা যায়।
এরপর আবার ন্যানো কী সব খুঁজতে লাগল। পিনা এবার একটা বক্সের ছবি দেখতে পেল। বঙ্গের মাথায় আবার কিছু শিং লাগানো আছে। পিনার দেখে একটু হাসি পেল। এটিকে দেখতে পিনার কেমন জানি তার দাদির পুরনো ভাঙা রেডিওর মতো লাগছিল। ন্যানো বলল, ‘নাহ, এটাও তো দেখি ঠিক আছে। পিনা ন্যানোকে জিজ্ঞেস করল, ‘ন্যানো এটা কী?’ ন্যানো বলল, ‘এটা রাউটার। এটা তুমি যে ই-মেইলটা তোমার ছোট মামাকে পাঠিয়েছ, তাকে ছোট ছোট করে ভেঙে তারপর তারে পাঠায়। তবে এর মূল কাজ হলো কোন তথ্য কার কাছে যাবে সেটার ব্যবস্থা করা। এজন্য একে ডিজিটাল ট্রাফিক পুলিশও বলে। একটু আগে তোমাকে যে ডিজিটাল ঠিকানাটা দেখালাম, রাউটার এটা দেখে তারপর ঠিকানা অনুযায়ী তথ্য একটা বড় ঘরে পাঠায়। পিনা খুব বুঝতে পেরেছে এমন ভাব করে মাথা নাড়াল।
এবার ন্যানো নিজে থেকে পিনাকে বলল, ‘পিনা দেখো এইটা হচ্ছে সেই বড় ঘর। এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয়। এখানে অনেক অনেক তথ্য পাওয়া যায়। যার যা তথ্য প্রয়োজন, তার অনেক তথ্য এখানে পাওয়া যায়। এই ঘরটাকে কী বলে জানো। কাজের মতোই এই ঘরের নাম। এই ঘরের নাম সার্ভার। মানে যিনি সাহায্য করে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি সহায়তা করে বা সার্চ করে। রাউটার থেকে পাঠানো ঠিকানাটা প্রথমে দেখে সার্ভার, তারপর যে তথ্যটি পাবে তার কাছে যে রাউটার থাকে সে রাউটারের কাছে তথ্যটি পাঠিয়ে দেয় সার্ভার। যাই হোক পিনা, এখানে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।“
এবার পিনা দেখল, তার প্রিয় ছোট মামার বাসাটা একটু একটু দেখা যাচ্ছে। পিনা খুশিতে চিৎকার দিল। ছোট মামার বাসা!!!! ন্যানোও চিৎকার দিল, “পিনা... তোমার মামার রাউটারে একটা সমস্যা আছে মনে হয়। তোমার ই-মেইলটাতো তোমার বাবার রাউটার ছোট ছোট করে ভেঙে পাঠিয়েছিল, তা এখানে এসে ঠিকমতো যোগ হয়নি। এটা রাউটারের ভেতরের সমস্যা। তুমি তোমার ছোট মামাকে বলতো রাউটারটা পরিবর্তন করতে।“
ন্যানো আরও বলল, পিনা তুমি কি আরও মজার কিছু দেখতে চাও?’ পিনা বলল, ‘অবশ্যই ন্যানো। আমার খুব মজা লাগছে তোমার সাথে সব কিছু দেখতে।‘ ন্যানোও খুশি হয়ে গেল। পিনা এবারে দেখল পানির নিচের কিছু একটা ছবি দেখা যাচ্ছে। পিনা আবিষ্কার করল, পানির নিচে লম্বা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। পিনা চিৎকার ………
দিয়ে বলল, ন্যানো!! এটা কি সাপ নাকি?’ ন্যানো হেসে দিল। বলল, আরে বোকা মেয়ে না। এটা হলো অপটিক্যাল ফাইবার, এক ধরনের তার। এর মধ্য দিয়ে তোমার ই-মেইল তোমার ছোট মামার কাছে যায়। পিনা বলল, ‘এত লম্বা মোটা তার, ই-মেইল যেতে তো সময় লাগে, তাই না ন্যানো?” ন্যানো বলল, ‘আরে না, অনেক দ্রুতগতিতে তথ্য যায় এর মধ্য দিয়ে, প্রায় আলোর গতিতে। চোখ ফুললে লাইটের আলো তোমার চোখে আসতে যতক্ষন লাগে, তার থেকে একটু বেশি সময় লাগে। শুনে পিনার চোখ বড় হয়ে গেল। ‘এত দ্রুত!!” ন্যানো বলতে লাগল, ‘জানো পিনা মাঝে মাঝে হাওরের কামরে বা অন্য কোনো মাছের বা প্রাণীর কারণে এই তার কেটে যায়। তখন অনেক সমস্যা হয়। তারপর আবার ঠিক করা হয়।‘ পিনা মাথা নাড়ল।
এবারে ন্যানো বলল, “পিনা তুমি কি এটা দেখতে পাচ্ছ?” পিনা বলে, ‘কি ন্যানো? আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।‘ ন্যানো বলল, ‘ও তুমি তো মানুষা তুমি দেখতে না পারারই কথা। আমি বলি তুমি শোনো। এখানে আমি ঢেউয়ের মতো অনেক আলো দেখতে পাচ্ছি। মানুষ এটা দেখে না। একে এক ধরনের তরঙ্গ বলে। আমি যে তোমাকে অপটিক্যাল ফাইবার দেখালাম, সেই অপটিক্যাল ফাইবার আর এই তরঙ্গ দিয়ে রাউটার, সার্ভার এগুলো তথ্য আদান-প্রদান করে। যাই হোক পিনা আর না দেখাই। তোমার মনে হয় এত কঠিন শব্দ শুনে মাথা ঘুরছে।
পিনার আসলেই মাথা ঘুরছিল এত কঠিন কঠিন শব্দ এত রাতে শুনতে পেয়ে। কিন্তু পিনা খুব খুশি হলো ই-মেইল না পৌছানোর কারণ জানতে পেরে। ন্যানোকে সে অনেক ধন্যবাদ দিল। তার ইচ্ছে করছিল, ন্যানোকে সে জড়িয়ে ধরে আদর করবে। ন্যানো বলল, ‘তোমার অনেক খুশি লাগছে, তাই না পিনা। আমারও খুব ভালো লাগছে তোমাকে সাহায্য করতে পেরে।
পিনার ই-মেইল পাঠানো গল্পটিকে যদি আমরা ডিজিটাল সিস্টেমের ভাষায় চিন্তা করি, তাহলে আমরা দেখতে পাই ডিজিটাল সিস্টেমে তথ্য আদান-প্রদান প্রক্রিয়ার প্রথমেই থাকেন প্রেরক। প্রেরক তথ্য পাঠিয়ে থাকেন আর যিনি তথ্যটি পান তিনি হচ্ছেন প্রাপক। প্রেরক যখন তথ্যটি পাঠান, তখন তার সাথে সাথে সেন্ডারের ডিজিটাল ঠিকানা ও প্রাপকের ডিজিটাল ঠিকানা দেওয়া থাকে। রাউটার প্রাপকের ঠিকানাটা ভালো করে পড়ে এবং ঠিকানা অনুযায়ী সার্ভারে পাঠায় তথ্যটি সঠিক জায়গায় পৌঁছানোর জন্য। সার্ভারে অনেকের ডিজিটাল ঠিকানা থাকে এবং তার থেকে খুঁজে সার্ভার দেখে তথ্যটি কোন রাউটারে যাবে। তারপর সার্ভার প্রাপকের রাউটারে সেই তথ্যটি পাঠিয়ে দেয়। প্রাপকের রাউটার তথ্য পায় এবং প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেয়। এই পুরো তথ্য আদান- প্রদান প্রক্রিয়ায় অপটিক্যাল ফাইবার তার হিসেবে এবং না দেখতে পাওয়া তরঙ্গ তারবিহীন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কখনো একটি মাধ্যম ব্যবহার করা হয়, কখনো দুটোই ব্যবহার করা হয়।
বাড়ির কাজঃ গল্প থেকে পাওয়া ডিজিটাল নেটওয়ার্কের সাথে সম্পৃক্ত শব্দগুলো আমাদের সহপাঠীদের থেকে পাওয়া উত্তরের বিশেষ শব্দের সাথে (তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত/ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কিত) মিলিয়ে নিই এবং বাড়ির সদস্য বড় শিক্ষার্থী/ শিক্ষকের সাথে শব্দগুলো নিয়ে আলোচনা করি। এছাড়াও নিচের অংশটি বাড়িতে সহায়তা নিয়ে বা নিজে নিজে পড়ি। |
|
ডিজিটাল সিস্টেমে যোগাযোগের মতোই আমাদের চারপাশে তাকালে যানবাহন দিয়ে যোগাযোগ ছাড়াও আমরা আরও কিছু যোগাযোগ তথ্য আদান-প্রদান নেটওয়ার্ক দেখতে পাই। দুটি যোগাযোগ তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থার কথা এখানে দেওয়া হয়েছে।
১। আমাদের ডাকযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং
২। মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগ ।
আমাদের কি মনে আছে পিনা প্রথমে তার মামাকে চিঠি পাঠাত? পরে মামা পিনাকে ই-মেইল পাঠাতে বললেন এবং পিনা বিপদে পড়ল। এই চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থাই ডাকযোগাযোগ ব্যবস্থা। যেমন ধরি, আমরা পঞ্চগড় থাকি এবং চিঠি পাঠার কক্সবাজার। যখন আমরা চিঠি পাঠাব আমাদের পঞ্চগড়ের ঠিকানা এবং যে চিঠি পাবে তার কক্সবাজারের ঠিকানা দেওয়া থাকে। এখানে আমরা প্রেরক এবং চিঠি যে পাবে সে প্রাপক। আমাদের চিঠি যখন জেলা ডাকঘরে যাবে, মানে পঞ্চগড় ডাকঘরে যাবে, তখন সে অফিসটা রাউটারের কাজ করে। পঞ্চগড় ডাকঘর যখন দেখবে চিঠি পঞ্চগড়ে কোথাও যাবে না, কক্সবাজার যাবে, তখন তা ঢাকার জাতীয় ডাকঘরে পাঠিয়ে দেবে। ঢাকার জাতীয় ডাকঘর সার্ভার হিসেবে কাজ করবে। ঢাকার জাতীয় ডাকঘর চিঠির ঠিকানা দেখে কক্সবাজার ডাকঘরে পাঠিয়ে দেবে। কক্সবাজার ডাকঘর এখানে প্রাপকের রাউটার। কক্সবাজার ডাকার ভালো করে কক্সবাজারের রাস্তা নম্বর, বাসার নম্বর, ব্যক্তির নাম পড়বে এবং ঠিক ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দেবে।
আমাদের চারপাশে আমরা প্রায় অনেককে দেখতে পাই মোবাইলের মাধ্যমে লিখে অন্য একজনকে কোনো তথ্য বা মেসেজ পাঠাতে। এটিকে আমরা সংক্ষেপে এসএমএস (SMS Short Message Service) বলি। আমরা যারা এসএমএস কথাটির সাথে পরিচিত নই, আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি হলো দুটি মুঠোফোনের মাঝে বার্তা চালাচালি করার ব্যবস্থা। একে ক্ষুদেবার্তাও বলা হয়। যখন আমরা আমাদের অভিভাবকের মোবাইল দিয়ে কোনো এসএমএস আমাদের বন্ধুকে পাঠাই, তা মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের মাধ্যমে একটি ক্ষুদেবার্তা সংরক্ষণ কেন্দ্রে জমা হয়। যখন আমাদের বন্ধু তার মোবাইল অন করে তখন তার মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা সংরক্ষণ কেন্দ্র বছর এলাকার মোবাইল টাওয়ারের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুর মোবাইলে ক্ষুদেবার্তাটি পাঠিয়ে দেয় এবং আমাদের বহু ক্ষুদেবার্তাটি দেখতে পায়। এখানে আমরা যেহেতু ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছি তাই আমরা প্রেরক, আমাদের বন্ধু হলো প্রাপক। আমাদের এলাকার মোবাইল টাওয়ার আমাদের রাউটার, বন্ধুর এলাকার মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার আমাদের বন্ধুর রাউটার এবং ক্ষুদেবার্তা সংরক্ষণ কেন্দ্র সার্ভারের মতো কাজ করে।
দেখো ডাক ব্যবস্থা এবং মোবাইলে এসএমএস ব্যবস্থা আমানের পিনার পাঠানো ই-মেইল ব্যবস্থার সাথে মিলে যায় তাই না? তবে সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা/তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা এতটা সরল নয়। আমাদের বাসার কেউ যদি ডাকঘরে কাজ করেন বা মোবাইল কোম্পানিতে কাজ করেন তাহলে তার কাছ থেকে আমরা আরও খুঁটিনাটি জেনে নিতে পারি। আর না জানতে পারলেও অসুবিধা নেই। আমরা ধীরে ধীরে তা জেনে যাব।
গত সেশনে আমরা আমাদের সহপাঠীদের থেকে ডিজিটাল সিস্টেমে তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য কিছু বিশেষ শব্দ পেয়েছিলাম (তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত/ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কিত)। আবার পিনা আর ন্যানোর গল্প পড়ে কিছু কিছু বিষয় নতুনভাবে জানতে পেরেছিলাম। এছাড়াও বাড়িতে পড়ে দেখেছিলাম কীভাবে আমাদের চিঠি এবং ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর ব্যবস্থার সাথে ডিজিটাল সিস্টেম দিয়ে তথ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া মিলে যায়। এই সেশনে আমরা আমাদের এই নতুন জানা বিষয়গুলোকে আরও ভালোভাবে অনুশীলন করব।
এবার আমি আবার আগের সেশনের গল্পের মাঝে। আমরা কি একটি প্রবাহ চিত্রের মাধ্যমে দেখতে পারি পিনার তথ্য তার ছোট মামার কাছে কীভাবে পৌঁছায়? নিচের ঘরে একটি খালি প্রবাহ চিত্র দেওয়া আছে। পাশের শব্দগুলো থেকে শব্দ নিয়ে আমরা সহপাঠীর সাথে আলোচনা করে এই খালি ঘরগুলো পূরণ করি। প্রয়োজনে পিনার ই-মেইল পাঠানোর গল্পটি থেকে আমরা সহায়তা নিতে পারি।
আমরা কি এবার আমাদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর ডিজিটাল সিস্টেমের মধ্যে ফেলে আবার লিখতে পারি? সহপাঠীর সাথে কথা বলে আমাদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর আবার লিখি। তবে এবার আমাদের মনে রাখতে হবে ডিজিটাল সিস্টেমের উপকরণগুলো ব্যবহার করে আমরা আমাদের উত্তরগুলো লিখব। একটি প্রশ্নের উত্তর উদাহরণ হিসেবে করে দেওয়া হয়েছে আমাদের জন্য।
প্রশ্ন -১ : রাজধানী থেকে সকল বাস, রেলগাড়ি ও লঞ্চ সময়মতো ছেড়ে যাবে কিনা তা কীভাবে নিশ্চিত করা
উত্তর : রাজধানী থেকে কোনো বাস, ট্রেন ও লঞ্চ ছাড়ার সময় যখন চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে তখন বাস, ট্রেন ও লক্ষের অফিসের এ দায়িত্বে নিয়োজিত একজন ব্যক্তি তার ডিজিটাল (কম্পিউটারে/ মোবাইলে) সময়সূচি দিয়ে দেবেন। এখানে এই ব্যক্তি হলো প্রেরক। তার তথ্য রাউটার দেখবে কার কার কাছে যাবে। ঠিকানা অনুযায়ী রাউটার তথ্যটি সার্ভারে পাঠাবে এবং সার্ভার তথ্যটি আমার ঠিকানা দেখে আমার রাউটারে পাঠাবে এবং আমি আমার রাউটার থেকে ঠিকমতো তথ্য পেয়ে যাব।
এখানে বলে রাখি, আমাকে এই তথ্য পেতে হলে কিন্তু ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোনের এসএমএস সেবা ব্যবহার করতে হবে যা মূলত একটি নেটওয়ার্ক।
প্রশ্ন ২ : রাজধানী থেকে সকল যাত্রী বিভাগীয় শহরে বাহন পরিবর্তন করতে পারল কিনা তা কীভাবে জানা। যেতে পারে?
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
প্রশ্ন-৩: সকল যাত্রী বাহনে উঠল কিনা এবং বিভাগীয় শহর থেকে জেলা শহর পর্যন্ত সময়মতো পৌঁছাতে পারল কিনা তা রাজধানী থেকে কীভাবে জানা যেতে পারে?
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
বাড়ির কাজ : এবারে পরের পৃষ্ঠায় আমাদের জন্য কিছু স্থানের নাম দেওয়া আছে, আমাদের ওই জায়গায় এই সেশনের যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর এঁকে দেখাতে হবে। উত্তর হিসেবে প্রেরক কোথায় আছে, কোথায় ব্রাউটার বসাব, কোথায় সার্ভার বসাব এবং কোথায় প্রাপক আছে তা নিজের মতো করে নির্ধারণ করতে হবে এবং প্রেরক, রাউটার, প্রাপক এবং সার্ভারের জন্য নির্ধারিত চিহ্নগুলো ব্যবহার করতে হবে। একটি উদাহরণ আমাদের জন্য করে দেওয়া আছে। তিনটি প্রশ্ন থেকে প্রথম প্রশ্নটির উত্তর এই নির্ধারিত অংশে আঁকলে কেমন হবে তা দেওয়া আছে। যেমন, ১ নম্বর প্রশ্নের উত্তরের জন্য, |
গত সেশনগুলোতে আমরা যানবাহন দিয়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের একটি চিত্র বানিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে ডিজিটাল সিস্টেমে তথ্য আদান-প্রদান নেটওয়ার্কের উপকরণ সম্পর্কে আমরা ধারণা পেয়েছিলাম। এছাড়াও আমরা আমাদের বইয়ে ডিজিটাল সিস্টেমে কীভাবে তথ্য আদান-প্রদান হয় তা সার্ভার, প্রেরক, রাউটার ও প্রাপক বইয়ে বসিয়ে দেখেছিলাম। চলো আমরা এবার একটা কাজ করি। আমরা সবাই মিলে আমাদের নিজেদের বইয়ে আঁকা নেটওয়ার্ক দিয়ে বড় একটি কাগজে একটি নেটওয়ার্ক বানাই, যেটা দেখতে হবে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মতো। নেটওয়ার্কটা অনেকটা এমন হবে।
এবারে আমরা আগের তৈরি যানবাহন দিয়ে যোগাযোগের বড় মানচিত্রটি অর্থাৎ নন-ডিজিটাল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং ডিজিটাল সিস্টেমে যোগাযোগের বড় কাগজটি পাশাপাশি বোর্ডে টানাই। দুটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাঝে, অর্থাৎ ডিজিটাল ও নন-ডিজিটাল নেটওয়ার্ক দুটির মাঝে তিনটি মিল এবং তিনটি অমিল সহপাঠীর সাথে কথা বলে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। একটি মিল ও একটি অমিল আমাদের জন্য করে দেওয়া আছে।
আগের সেশনে আমরা দুই ধরনের তথ্য ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাঝে মিল ও অমিল খুঁজে বের করলাম। এবার চলো এ সেশনে আমরা একটি শিখন নেটওয়ার্ক বানাই। আমরা আমাদের এই শিখন অভিজ্ঞতার শুরুতেই বলেছিলাম আমাদের কোনো সহপাঠী যেন কখনো যোগাযোগের অভাবের কারণে পিছিয়ে না পড়ে। তারই চেষ্টা করব এই শিখন অভিজ্ঞতায়। এবার আমরা আসল কাজটি করব। আমাদের বিদ্যালয়ে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমরা একধরনের বিদ্যালয় শিক্ষন নেটওয়ার্ক বানাব।
চলো শিখন নেটওয়ার্ক বানানোর জন্য নিচের ছোট কাহিনীটি সহপাঠীর সাথে মিলে পড়ি।
‘আনন্দপুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষক খুশি আপা। একটি ধর্মীয় উৎসবের কারণে ‘আনন্দপুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুশি আপা ঠিক করলেন, এবারে এই ধর্মীয় উৎসবে সবাইকে যে যেই ধর্মেরই হোক না কেন, শুভেচ্ছা জানাবেন। তিনি প্রত্যেকের জন্য কাগজ কেটে শুভেচ্ছা কার্ড বানাবেন এবং সবার ঘরে পৌঁছে দেবেন। তাই তিনি বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের মালি করিম কাকাকে বললেন যেন বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে আশা মার্কেটের সামনের দোকানের মনিরের সাথে কথা বলে রাখতে যেন যে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বিদ্যালয়ের দক্ষিণে তারা যাতে মনিরের দোকান থেকে তাদের কার্ড নিয়ে যেতে পারে। ঠিক একইভাবে উত্তরের ‘বাবা মার দোয়া চায়ের দোকানের জরিনার, পশ্চিমে। মসজিদের ইমাম এবং পূর্বে ‘ভাইবোন’ ফটোকপির দোকানের আবুলের সাথে কথা বলতে বললেন যেন উত্তর পশ্চিম ও পূর্বের শিক্ষার্থীরাও কার্ড নিয়ে যেতে পারে। ঠিক অনেকটা এরকম-
এটা কিন্তু একটা নেটওয়ার্ক। শুধু উপহার পাঠানোর জন্য না, যদি বিদ্যালয় বন্ধ থাকে তাহলেও কিন্তু খুশি আপা এভাবে ‘আনন্দপুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এর যত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াতেও পারবেন। খুশি আপা পড়া বা কাজ বুঝিয়ে দেবেন একটা কাগজে, তারপর করিম কাকা সেগুলো নির্ধারিত জায়গায় দেবেন। শিক্ষার্থীরা নিজে এসে বা শিক্ষার্থীদের বাবা-মা এসে পড়া গুছিয়ে লেখা কাগজটি নিয়ে যেতে পারেন। একইভাবে শিক্ষার্থীরা তাদের কাজ করে নিজে বা বাবা-মায়ের সহায়তায় নির্ধারিত জায়গায় দিয়ে আসতে পারেন এবং করিম কাকা একদিন গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ নিয়ে আসতে পারেন।
এবারে আমরা আমাদের নন-ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বানাব। আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক মাঝে খুশি আপার জায়গায় বসবেন। আমাদের আরও একজন ঠিক করতে হবে করিম কাকার মতো এবং চারটি জায়গা বা প্রয়োজনে তারও বেশি জায়গা নির্ধারণ করতে হবে, যেখান থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য বা শিক্ষকের কাছ থেকে নির্দেশ পাব।
আমরা কাজটি শিক্ষকের সহায়তায় শ্রেণির বোর্ডে করব। এবং আমাদের নেটওয়ার্ক আঁকা হয়ে গেলে নিচের ঘরে এঁকে রাখব।
পরবর্তী সেশনের জন্য প্রস্তুতি:
পরবর্তী সেশনের জন্য আমরা আমাদের বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বর এবং যদি বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বর না থাকে তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যদের যে মোবাইল নম্বর আছে তা নিয়ে নিয়ে আসব। মোবাইল নম্বর। অবশ্যই তাদের অনুমতি নিয়ে তারপর নিয়ে আসব। আমার সাথে যোগাযোগ করার মোবাইল নম্বর নিচের খালি জায়গায় লিখে নিয়ে আসব। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন মানুষের মোবাইল নম্বর তার ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য। কাজেই আমরা চেষ্টা করব এই কাগজ যেন হারিয়ে অন্য কারও হাতে চলে না যায়। আমরা শুধু আমাদের শিক্ষককে এই তথ্যগুলো দেব।
আমার সাথে যোগাযোগ করার মোবাইল নম্বর ০১…………………………………….
গত সেশনে আমরা এক ধরনের শিখন নেটওয়ার্ক বানিয়েছিলাম। এই সেশনে আমরা আরও দুই ধরনের শিক্ষন নেটওয়ার্ক বানাব। একটি শুধু মোবাইল সেবা দিয়ে আর একটি ইন্টারনেট সেবা দিয়ে।
আমাদের মোবাইল নম্বরগুলো আমাদের শিক্ষকের কাছে দিতে হবে। শিক্ষক সবগুলো মোবাইল নম্বর তার নিজের মোবাইলে সেভ (সংরক্ষণ) করবেন। সবগুলো মোবাইল নম্বর দিয়ে শিক্ষক একটি এসএমএস গ্রুপ খুলবেন। আর যে সকল মোবাইলে ম্যাসেজিং অ্যাপ আছে যেমন হোয়াটসআপ, ম্যাসেঞ্জার, ইমো, ভাইবার ইত্যাদি সে সকল মোবাইল নাম্বারের জন্য শিক্ষক যে কোনো একটি অ্যাপ ব্যবহার করে একটি গ্রুপ খোলবেন। এই সকল ম্যাসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে আমরা ছবি, ফাইল, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি আদান প্রদান করতে পারি। তবে এর জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়। আমাদের তৈরি করা ম্যাসেজ গ্রুপটি নিচের নেটওয়ার্কের মতো কাজ করবে।
আমাদের সব ধরনের শিখন নেটওয়ার্ক বানানো হয়ে গেলে শিক্ষক একটি বার্তা/চিঠি সকল নেটওয়ার্ক দিয়ে। আমাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। গত সেশনে আমরা যে নেটওয়ার্ক বানিয়েছিলাম, সেই নেটওয়ার্ক এবং এই সেশনের দুই ধরনের নেটওয়ার্ক দিয়েই শিক্ষক বার্তা পাঠাবেন।
বার্তাটি হতে পারে, বিদ্যালয় শিক্ষন নেটওয়ার্কে আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই।
এভাবে আমাদের শিখন নেটওয়ার্ক বানানো শেষ হলো। কিন্তু এই নেটওয়ার্ক আমাদের জন্য কেবল শুভ। আমরা সব সময় আমাদের সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারি এবং আমরা ব্যবহার করব।
Read more